একজন সফল ইউটিউবার (Success Youtuber) হওয়ার জন্য ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং নিয়মিত কাজ করা প্রয়োজন। একজন দ্রুত সময়ের সফল ইউটিউবার (Success Youtuber) হতে চাইলে আপনাকে বিকল্প সব কাজ দিয়ে মনোযোগ সহকারে ইউটিউব এর পিছনে লেগে পড়তে হবে। আজকে আমার জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সফল ইউটিউবার হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
একটি নির্দিষ্ট বিষয় (Niche) বেছে নিন
একজন সফল ইউটিউবার (Success Youtuber) সব বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারে না। ইউটিউবার হওয়ার শুরুতে আপনি কোন বিষয় নিয়ে কাজ করবেন সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যেমন:,টেক রিভিউ, ভ্লগ (daily life), রান্না, শিক্ষা বা টিউটোরিয়াল,গেমিং,ফানি ভিডিও এসব বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করলে দর্শক একটানা ফিরে আসে। তাই একজন ইউটিউবার হিসেবে কাজ করার শুরুতে আপনার প্রথম মূল কাজ হচ্ছে বিষয় নির্বাচন।
ভিডিওর গুণমান ঠিক রাখুন
ইউটিউবের ক্যাটাগরি নির্বাচন করার পরে আপনার কাজ হচ্ছে ভিডিও তৈরি করার সকল সরঞ্জাম প্রস্তুত করা। একটি মোবাইল দিয়েও ভালো ভিডিও বানানো যায়, যদি পরিবেশে আলো ও শব্দ ভালো হয়। আপনি চাইলে সস্তা লাইট আর মাইক্রোফোন দিয়েই শুরু করতে পারবেন। ধীরে ধীরে আপনি যখন একজন বড় ইউটিউবার হিসেবে পরিচিতি লাভ করা শুরু করবেন তখন আপনি নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে দামি কিছু সরঞ্জাম কিনে নিজস্ব একটি স্টুডিও তৈরি করতে পারেন।
JOIN TECH CTG TELEGRAM CHANNEL
ভালোভাবে স্ক্রিপ্ট বা পরিকল্পনা করুন
একটি ভিডিও তৈরি করার আগে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি স্ক্রিপ্ট রেডি করতে হবে। যেমন আপনি ভিডিও বানানোর আগে ঠিক করতে পারে, কী বলবেন? কী দেখাবেন?
ভিডিওর শুরু ও শেষ টা কেমন হবে? এসব বিষয় নিয়ে একটি সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট রেডি করুন।স্ক্রিপ্ট তৈরি না করলে আপনার ভিডিওটা কিছু এলোমেলো পরিকল্পনা তৈরি হবে। তাই ভিডিও তৈরি করার আগে স্ক্রিপ্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত ভিডিও আপলোড করুন
ভিডিও তৈরি করার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে নিয়মিত ভিডিওগুলা আপলোড করা। সপ্তাহে কমপক্ষে ১–২টি ভিডিও আপলোড করার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার পছন্দমত একটি দিন ঠিক করে নিন (যেমন প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় অথবা প্রতি সোমবার সন্ধ্যায় অথবা প্রতি শুক্র ও সোমবার সন্ধ্যায়। এভাবে নির্দিষ্ট একটি দিন এমন সময় নির্ধারণ করুন। শুরু থেকে এই দিনগুলোকে সামনে রেখে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে যাবেন।
আকর্ষণীয় থাম্বনেইল ও টাইটেল দিন
আপনার ভিডিওতে বেশিরভাগ দর্শক ক্লিক করবে আপনার থাম্বেল এবং টাইটেল দেখে। তাই ভিডিওর ছবি বা (thumbnail) যেন চোখে লাগে সেভাবে তৈরী করবেন। টাইটেল যেন স্পষ্ট ও সবার মনে কৌতূহল জাগায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। মূলত আপনার ভিডিওর থাম্বেল এখন টাইটেলের প্রতি যাতে মানুষের নজর যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। আপনার থাম্বেল এবং ভিডিওর টাইটেল দেখিয়ে মানুষকে আপনার ভিডিওতে ক্লিক করাতে বাধ্য করাবেন।
দর্শক ধরে রাখুন
আপনি যখন আপনার থাম্বেল এখন টাইটেল দেখিয়ে মানুষকে আপনার ভিডিওতে প্রবেশ করাবেন তখন আপনাকে চেষ্টা করতে হবে এই দর্শক যেন আপনার সম্পূর্ণ ভিডিও দেখতে থাকে।তাই আপনাকে ভিডিওর প্রথম ৩০ সেকেন্ডে এমন কিছু বক্তব্য রাখবেন যাতে একজন দর্শক আপনার ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখতে বাধ্য হয়। তাই ভিডিওর শুরুতে আকর্ষণীয় এবং লোভনীয় কিছু কথা উল্লেখ করার চেষ্টা করুন।
দর্শকের সাথে যোগাযোগ রাখুন
যে দর্শক গুলো নিয়মিত আপনার ভিডিও দেখে এবং আপনার ভিডিওটা কমেন্ট করে তাদের কমেন্টের উত্তর সাথে সাথে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ভিডিও তৈরি করার সময় আপনার ভিডিওতে প্রশ্ন করুন: “আপনার মতামত কী? বা দর্শক আপনার মতামত কমেন্ট করে যান।
দ্রুত দর্শক এবং চ্যানেল ব্যাংকে নিয়ে যেতে চাইলে মাঝে মাঝে লাইক করার চেষ্টা করুন।
YouTube Analytics বুঝুন
ইউটিউবের এলগরিদম বোঝার চেষ্টা করতে হবে। youtube এর অ্যালগরিদম সম্পর্কে ইউটিউবে প্রচুর পরিমাণ ভিডিও রয়েছে সেগুলো দেখে ইউটিউবের অ্যালগোরিদম নিয়ে জ্ঞান অর্জন করুন। আপনার চ্যানেলে কোন ভিডিও ভালো চলেছে? আপনার ভিডিও দর্শক কতক্ষণ দেখে? এসবের উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পরবর্তী ভিডিও ক্যাটাগরি বা টপিক ঠিক করুন।যদি কোন ভিডিও ভাইরাল হয় আপনার চ্যানেলে ওই ভিডিও পুনরায় কিছু নতুনত্ব যোগ করে আপলোড করার চেষ্টা করুন।
Read More : ইউটিউব চ্যানেল রিমুভ হওয়ার মুল কারণ ও সম্পূর্ণ গাইডলাইন
ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে ভিডিও বানান
বর্তমানে কোন বিষয়টি ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। ট্রেন্ড ধরে ভিডিও তৈরি করলে দ্রুত ভিউ বাড়ে।
বিউ বাড়লে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বাড়বে। সাবস্ক্রাইবার পারলে দ্রুত আপনার চ্যানেল র্যাংকে উঠবে।
তবে আপনার চ্যানেলে প্রত্যেকটা ভিডিও হতে হবে আপনার ক্যাটাগরির সাথে মিল। একই চ্যানেলে ফানি ভিডিও এবং অন্যান্য রান্নার ভিডিও আপলোড করলে সেই চ্যানেল কখনো র্যাঙ্ক করে না।
আয় করতে চান?
youtube এর নিয়ম অনুযায়ী আপনার চ্যানেলে যখন ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার + ৪,০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম হবে তখন YouTube থেকে ইনকাম শুরু হবে। (AdSense)
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পনসরশিপ, পেইড রিভিউ এসব বিষয় দিয়েও চাইলে আপনি youtube থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
ধৈর্য ধরুন, হাল ছাড়বেন না
একজন ইউটিউবার হতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে সেটি হচ্ছে ধৈর্য্য। আপনি কখনো ধৈর্য হারাতে পারবেন না এবং হাল ছেড়ে দিতে পারবেন না। নতুন নতুন চ্যানেলে প্রথম ৬ মাসে কম ভিউ আসা স্বাভাবিক।কখনো শুরুতে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। youtube সম্পর্কে ভিডিও দেখে ইউটিউব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। নতুন নতুন বিষয়বস্তু জেনে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করুন। শুধু ভিডিও আপলোড করা আর ইনকাম করা একজন ইউটিউবার এর কাজ নয়।
দক্ষতা অর্জন
আপনাকে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভিডিও এডিটিং এ আপনাকে আরো দক্ষ হতে হবে। বর্তমানে AI এর যুগ চলতেছে।বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে তথ্য প্রযুক্তিতে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আপনার ভিডিও টপিক খারাপ হলেও আপনার এডিটিং যদি চমৎকার হয় তাহলে মানুষ আপনার ভিডিও সম্পন্ন দেখতে বাধ্য হবে।
একজন সকলে ইউটিউবার হতে চাইলে উপর এসব বিষয়গুলো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উপরের সব বিষয়গুলো মাথায় রেখে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শুরুর দিকে আপনাকে একটু হতাশ হতে হবে। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন আর আপনাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আপনার চ্যানেল আপনাকে অনেক উপরে নিয়ে যাবে। তাই ধৈর্য ধরে একটানা নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে কাজ চালিয়ে যান। ইনশাআল্লাহ আপনি একজন সফল ইউটিউবার হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারবেন।