একটি আদর্শ ক্রিকেট মাঠ তৈরির জন্য কিছু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম কানুন এবং মানদণ্ড অনুসরণ করতে হয়। একটি আদর্শ ক্রিকেট মাঠ তৈরির বৈশিষ্ট্য গুলো অনুসরণ করে একটি আদর্শ ক্রিকেট মাঠ তৈরি না করলে, সে মাঠে ক্রিকেট খেলে তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা যায় না। নিচে একটি আদর্শ ক্রিকেট মাঠ তৈরির গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো:
আদর্শ ক্রিকেট মাঠ তৈরির নিয়মসমূহ
মাঠের আকার (Ground Dimensions):
একটি আদর্শ ক্রিকেট মাঠ সাধারণত বৃত্তাকার বা ডিম্বাকৃতি মাঠ হয়ে থাকে।
বাউন্ডারি লাইনের দূরত্ব
টিকেট মাঠের পিচের মাঝখান থেকে বাউন্ডারি পর্যন্ত সাধারণত সর্বনিম্ন 59.43 মিটার (65 গজ) এবং
সর্বাধিক 82.29 মিটার (90 গজ) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং বাউন্ডারি লাইনের অর্থাৎ সীমানা থেকে নিরাপত্তার জন্য কিছু অতিরিক্ত জায়গা রাখতে হবে যা অন্তত (সাধারণত 3–5 মিটার)।
পিচের মাপ (Cricket PitchDimensions)
একটি আন্তর্জাতিক আদর্শ ক্রিকেট মাঠের জন্য দৈর্ঘ্য হতে হবে 22 গজ যা মিটারে (20.12 মিটার) এবং প্রস্থ হবে 10 ফুট যা মিটারে (3.05 মিটার)পর্যন্ত হয়ে থাকে। আদর্শ ক্রিকেট মাঠের পিচের পৃষ্ঠতল কড়া না শক্ত মাটি অথবা ঘাসযুক্ত মাটি থাকতে হবে (টেস্ট ক্রিকেটে পিচের মধ্যে সাধারণত ঘাস থাকে)। সাধারণত গ্রামে গাছ যুক্ত মাঠ করা সম্ভব হয়না সেহেতু গ্রামের মাঠ অবশ্যই সমান করার চেষ্টা করতে হবে।
ক্রিজ ও মার্কিং (Crease Markings):
একটি আন্তর্জাতিক আদর্শ ক্রিকেট মাঠের বোল করার ক্রিজ সাধারণত স্টাম্প যেখানে থাকে তার ঠিক নিচে এবং পিচের দুই প্রান্তে হয়। আদর্শ ক্রিকেট মাঠের পপিং ক্রিজ অর্থাঠ যেখানে পা গেলে সাধারণত নোবল হয় সেটি বোল করার ক্রিজ থেকে সাধারণত মিটারে 1.22 মিটার বা ফুটে (4 ফুট) সামনে হয়ে থাকে।
একটি ক্রিকেট মাঠের রিটার্ন ক্রিজ মুলত স্টাম্পের দুইপাশে যা মিটারে 1.32 মিটার বা ফুটে (4 ফুট 4 ইঞ্চি) দূরে এবং পপিং ক্রিজ বরাবর প্রসারিত হয়ে থাকে।
আমাদের TECH টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হন
স্টাম্প ও বেলস (Stumps and Bails):
ক্রিকেট মাঠের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্ট্যাম্প ও বেলস। সাধারণত ক্রিকেট মাঠে স্ট্যাম্পের উচ্চতা 71.1 সেন্টিমিটার (28 ইঞ্চি) হয়।
এবং দুটি স্টাম্পের মধ্যকার দূরত্ব নূন্যতম 22.86 সেমি (9 ইঞ্চি) হয়।
স্ট্যাম্প এর উপরে যে বেল্ট দেওয়া হয় সে বেলসের দৈর্ঘ্য 10.95 সেমি (4.31 ইঞ্চি) হয়।
আউটফিল্ড
একটি ক্রিকেট মাঠের আউটফিল্ড অবশ্যই সমতল ও ঘাসযুক্ত হতে হবে।ক্রিকেট মাঠে ভালোভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে বৃষ্টির পর দ্রুত খেলা শুরু করা যায়।
দর্শক গ্যালারি ও নিরাপত্তা
একটি ক্রিকেট মাঠের মূল সৌন্দর্য হচ্ছে দর্শক। তাই একটি আদর্শ ক্রিকেট মাঠে পর্যাপ্ত দর্শক ধারণ ক্ষমতা এবং খেলার নিরাপত্তা ও খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে সাথে মাঠে নিরাপত্তা ব্যারিয়ার নিশ্চিত করতে হবে।
Read More : একটি আদর্শ ফুটবল মাঠ তৈরির নিয়মসমূহ কি কি
ফ্লাডলাইট ও টেকনিক্যাল সুবিধা
যদি ক্রিকেট মাঠে ডায়ানাইট খেলার ব্যবস্থা থাকে তাহলে ডে-নাইট ম্যাচের জন্য উচ্চ ক্ষমতার ফ্লাডলাইট
ক্যামেরাম্যান,স্কোরবোর্ড,রিভিউ সিস্টেম DRS (Decision Review System) সাপোর্ট এগুলোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্যাভিলিয়ন ও ড্রেসিংরুম
ক্রিকেট মাঠের প্যাভিলিয়ন এবং ড্রেসিং রুম থাকা আবশ্যক। ক্রিকেট মাঠের মধ্যে দুই দলের জন্য পৃথক ড্রেসিংরুম কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট, অফিসিয়ালদের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ থাকতে হবে। সেই সাথে মিডিয়ার জন্য আলাদা রুম থাকা আবশ্যক।
অন্যান্য ব্যবস্থা
আপনি যদি ক্রিকেট মাঠের ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে চান তাহলে আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির অফিস করতে পারেন সেই সাথে সংবাদমাধ্যমের জন্য আলাদা প্রেস বক্স ও দর্শকদের জন্য খাবার ও পানি ব্যবস্থা করতে পারেন।
আপনি যদি একটি ক্রিকেট মাঠ তৈরি করতে চান তাহলে উপরের নিয়মগুলো ফলো করতে পারেন। তবে আপনি যদি এরকম একটা ক্রিকেট মাঠ তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে সবকিছুটাই আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। আর আপনি যদি গ্রামে একটি ক্রিকেট মাঠ তৈরি করতে চান তাহলে এত কিছু ফলো না করলেও চলবে। আপনি গ্রামে একটি আপনার মন মত করে ক্রিকেট মাঠ তৈরি করতে পারবেন তবে মাঠের দৈর্ঘ্য এবং ফ্রিজের দৈর্ঘ্য অবশ্য ঠিক রাখতে হবে।